ডেয়ারিং শব্দের মানে খুজছিলাম ডিকশনারি তে, পেয়েও গেলাম। নানা অর্থ আছে শব্দটির অডিসিয়াস, ভেঞ্চারাস, ভেঞ্চারসাম!! কিন্তু আমার কাছে এই শব্দ টির মানে অন্যকিছু, কোন মানুষ- ! মানে ইলা।ইলা আমার পরিচিতা নয়, কিন্ত তার চেয়েও অনেক বেশীকিছু।
শুরু ১লা এপ্রিল ২০০৩, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের প্রথম দিন, মাথার চুলে ঘন করে তেল দিয়ে, বাম
পাশে টেরি কেটে, একটা ফুল হাতা শার্ট, কালো প্যান্ট পরে আমি আমার ক্লাসে। বলা বাহুল্য, আমার প্রবেশে অনেকেই চমকে গেল সেদিন! একজন তো বলেই ফেলল, রে বাব্বা, এ আবার কেমন? যেখানে স্পাইক, জেল এর ছড়াছড়ি। ক্লাসে সবাই যেখানে উচ্ছল, হইচই, আনন্দে মত্ত
সেখানে আমি লুকিয়ে আছি এক খোলসে। উপাধি এল ভীতুর ডিম! আসলে আমি ভীতু ছিলাম না, আমি কেন জানি সে সময়কার মানুষগুলোর সাথে মানাতে পারি নি। ভর্তি পরিক্ষায় ভাল করার দরুন শিক্ষক মহলে পরিচিতি পেয়েছি বটে কিন্তু সহপাঠী বন্ধুদের মাঝে তখনও অপরিচিত অজানা এক মুখ। তবে পরিচিতি পেতে সময় লাগেনি খুব বেশি, সুখকর কিংবা দূ:খকর কি বলব!
সেদিনছিল- আমাদের ব্যাচের প্রথম শিক্ষাসফর, সবাই সবাইকে সাহায্য করছে। আমিও
সেখানে কাজে লেগে গেলাম। আমার দায়িত্ব পড়ল পানি নিয়ে আসার। আধ মাইলে কাছাকাছি একটা বাড়িতে টিউবওয়েল পেয়ে গেলাম। মনে মনে প্লান করেছি আমিই সবচে বড় কাজ করেছি তার প্রমান দেবার! হাতের দুটো বালতি ইচ্ছেমতন গলা পর্যন্ত ভরে মিনিট বিশেক এর মাঝেই চলে এসেছি আমাদের পিকনিক স্পটে। ওই!!! পানি ভরে আনতে এতক্ষন লাগে?
বিষম খেয়ে গেলাম!
বালতি দুটো মাটিতে নামাতে গিয়ে একটা হেলে গিয়ে অর্ধেক
পড়ে গেল।
-দিলি তো ! এখন তো আবার ঘন্টা খানেক লাগাবি পানি আনতে!
-না, এত দেরী তো করিনি!
-হাতে ঘড়ি আছে তোর?
নিজের হাতে একবার তাকালাম, আরে হাতে তো ঘড়ি নেই!
-কি? এবার কি?
-এক্ষুনি আবার আনছি। ছুটলাম ধুন্দুমার!
আমার অবস্থা দেখে একগাদা সহাস্যমুখ তৈরি হতে এক সেকেন্ড সময় ও নিল না।
আমার পেছন ফিরে ঝেড়ে দৌড় দেবার সেই ট্রেডমার্ক ছবি এখনো এক্সক্লুসিভ!! কোন একজন
মিচকে শয়তান বন্ধু স্থিরচিত্রে ধরে রেখেছিল সে মূহুর্তে। ঝারি আমি অবশ্য কোন শিক্ষকের কাছে খায়নি,
ঝারি খেয়েছিলাম ইলা'র কাছে। মোস্ট ডেয়ারিং গার্ল ইন আওয়ার ডিপার্টমেন্ট।
টম বয় শব্দের সাথে যারা কিছুটা হলেও পরিচিতি তারা এ বিষয়টা ভাল বুঝবেন।
ইলা পুরোদস্তুর টমবয়।
শেষতক শিক্ষাসফরের ভ্রমণ শেষে অশিক্ষা মাথায় নিয়ে হলে ফিরলাম। আর বন্ধু মহলে ফিরলাম- ভীতু হলোগ্রাম নিয়ে।
ভেবেছিলাম সফর শেষে সবকিছুই মিলিয়ে যাবে কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি।
ইলা এবার আমাকে দু চোখে দেখতে পারে না। এর কারন অবশ্য মোটেই আমি না। আমার সব
ক্লাসমেট!
কেউ নাকি ইলাকে বলেছে আমি নাকি ইলার প্রেমের হারিয়ে গেছি! আর যাই কই!
ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছিলাম। আদা চা,
আমার আবার সহজেই বেশ ঠান্ডা লেগে যায়। গলায় মাফলার খান পেচিয়ে আয়েশ
করে চা তে এক চুমুক দিয়েছি কি দেইনি হঠাৎ কোথা থেকে ঝেরে এসে হাজির ইলা।
চোখ প্রায় জ্বলছে, টেবিলের দুটো চেয়ারের একটা এখনো খালি।
আমি ভদ্রতা করে হাসিমুখে বললাম, 'বোস ইলা, চা অর্ডার করি, না কফি খাবে?’
আমার মতে, চা ভাল হবে, আমি আদা চা খাচ্ছি। আদা চা বেশ ভালো '।
ইলার হাত দুটো কোমড়ে ধরা ইংরেজী L এর মত করে। বাম কপালে চুল বাতাসে উড়ছে- চোখ বেশ বড়বড় করে তাকিয়ে আমার দিকে…
কিন্তু এরপর আচমকা ইলা যা করল তা আর না বলার মত--! চেয়ার থেকে তুলেই আমার গলার মাফলার টেনে ধরে সোজা করে দাঁড় করাল তারপর দুহাতে সেটা টেনে ধরে নিয়ে চলল সবার সামনে দিয়ে হুরহর করে… নে চল আজ, তোর আজ খবর আছে!
(হা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখছে ভার্সিটি ক্যান্টিনের সব ছেলেমেয়ে)
এখনো,
রাগে ফুঁসছে ইলা, (আমরা দুজন এখন ভার্সিটির ঠিক মাঠের কাছে, লোকজন আশেপাশে খুব একটা নেই(
তোর এত্তবড় সাহস!! তুই আমাকে ভালবাসিস?
মাথা, হাত দু'টো নেড়ে বার বার বোঝাতে চাচ্ছি আমি মোটেই এসব বলিনি, সব ভুল!
কোন ভাবেই মানছে না ইলা।
অবশেষে বললাম, আসলে তোমাকে কেউই তো ভালবাসে না!!
-কি বললি তুই? (দিগুন রেগে গেল এবার! এবার আর থাকা গেল না। আমি ছুটছি আমার
পেছন ইলা!)
এরপর ক্লাসে কি ক্যান্টিনে, যেখানেই
ওকে দেখতাম লুকিয়ে যেতাম। এ ঘটনার পর বন্ধু বান্ধব আর কেউ আমাদের নিয়ে আর মজা করেনি। ইলাও এতটা সিরিয়াস হয়ে যাবে কেউ ভাবেনি!
অনেকদিন পরের কথা...
আমাদের অনার্স ফাইনাল হয়ে গেছে। বন্ধু মহলে যারা এতদিন সিংগেল ছিল তারা অনেকেই ডুয়েল হয়ে গেছে। আমাদের আড্ডা দেবার গ্রুপ ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে।
এখনো আমি ইলাকে ভীষন ভয় পাই। ও এখনো একা! মানে সিংগেল।
০৮ অক্টোবর - ২০১৪
গল্প/কবিতা:
১০ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী